বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৯ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাবেক রাজনৈতিক সচিব ও সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিন্তা করলেন একদিন বাংলার মানুষকেই এই বাংলার ভাগ্য নিয়ন্ত্রক হতে হবে। তিনি সেই লক্ষ্যে কাজ করে গিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে তিনি প্রথমে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পরে ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তিনি তার লক্ষ্যে এগিয়ে গিয়েছেন। সেই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে তিনি ১৩টি বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন, তবুও আপস করেননি। তিনি ছিলেন আপসহীন নেতা।
আজ বুধবার সকালে ভোলা বাংলাস্কুল মাঠের ভাসানী মঞ্চে ভোলা জেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, জাতীর জনক ১৯৭১ এর ৭ই মার্চ একটি ভাষণের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীকে একত্র করেছিলেন বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন বিচক্ষণ নেতা। তার মতো নেতা বিরল। তিনি যা বিশ্বাস করতেন তাই তিনি করতেন। তিনি তার বিশ্বাসের সাথে কখনো আপস করেননি। পাকিস্তানের যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছিল সেই সরকারই তাকে কারাগারে নিয়েছিল। ১৯৭১ এ পাকিস্তানের মেওন আলী কারাগারে যখন বন্দি তখন তাকে কারাগারের মধ্যে ফাঁসি দেওয়ার জন্য কবরের পাশে দাঁড় করিয়েছিল। তখন তিনি বলেছিলেন আমি কবরকে ভয় পাই না। তোমরা আমাকে ফাঁসি দেবে, দাও। আমি জানি যে বাংলার দামাল ছেলেরা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে সেই জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারে না।
বঙ্গবন্ধু কোনোদিন ১৭ মার্চে নিজের জন্মদিন পালন করেননি উল্লেখ করে জাতীর জনকের সাবেক রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহেমদ আরো বলেন, ১৭ মার্চ যে দিন বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়া খানের সাথে দেখা করে ধানমন্ডি ফিরেছিলেন তখন সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ধরে বলেছিলেন আজকে আপনার জন্মদিন। আজকের দিনে আপনার প্রত্যাশা কি। তিনি বলেছিলেন, সামগ্রিকভাবে জাতির মুক্তি। তারপর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি আমার জন্মদিন পালন করি না। আমি আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালাই না। আমি কেক কাটি না। যে দেশের মানুষ ক্ষুধা, অর্ধাহারে, অনাহারে মৃত্যুবরণ করে, কথায় কথায় গুলি করা হয় তাদের নেতা হিসেবে আমার জন্মদিনই কি আমার মৃত্যুদিনই কি! আমি তো আমার জীবন বাঙালি জাতির জন্য উৎসর্গ করেছি। সত্যিই তিনি তার জীবন বাঙালি জাতির জন্য উৎসর্গ করেছিলেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আজ অনেক বড় বড় নেতা বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে অনেক ঐতিহাসিক কথা বলেছেন উল্লেখ করে সাবেক ডাকসুর ভিপি আরো বলেন, তিনি ছিলেন প্রেরণাদানকারী একজন নেতা। বিশ্বে তিনি ছিলেন একজন মর্যাদাশালী নেতা। বঙ্গবন্ধুর স্নেহেধন্য হয়েছেন উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, বিদেশিরা যেভাবে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করতেন তা কল্পনা করাও যায় না। যেমন সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেন যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিনি, সোভিয়েত প্রেসিযেন্ট নিকোলাই পদগর্নির, পরাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে গ্রেমিকো, রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি লিওনিদ ব্রেজনেভ, এই প্রভাবশালী চার নেতা তাকে অভ্যর্থনা জানান।
তিনি যুগোস্লাভিয়া গেলে প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো এবং প্রধানমন্ত্রী জামাল বিয়েদিস জাতীর জনককে অভ্যর্থনা জানান। তিনি মিসরে গেলেন, আনোয়ার সাদাত মিসরের প্রেসিডেন্ট, জাকারিয়া মহিউদ্দিন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। অর্থাৎ পাকিস্তানে গিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ফজলে এলাহি, জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুজনেই বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। তিনি এমন একনেতা ছিলেন যার জন্য কোনো প্রটোকল ছিল না। প্রটোকল ভেঙে প্রধানমন্ত্রী আসেন কিন্তু বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও অনেক রাষ্ট্রপতিও বঙ্গবন্ধুকে নেওয়ার জন্য বিমানবন্দর আসতেন। আজ জাতির জনকের যোগ্যকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। এ যাত্রায় বাংলাকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে আসবেন বলে জানান তিনি।
ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জুলফিকার আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মমিন টুলু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম গোলদার, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম নকিব, জেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লবসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ।
Leave a Reply